আজ বিশ্ব বাবা দিবস [ বাবা দিবসের আদ্যোপান্ত ]

প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস। সেই হিসেবে ২১শে জুন ২০২০ রবিবার আমাদের দেশে বাবা দিবস পালিত হবে। অবশ্য মা দিবস কয়েকশো বছরের ধরে পালন হচ্ছে, বাবা দিবসটি সেই দিক থেকে নতুনই বলা যায়।

বাবা দিবসটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালু হয়েছে। ওয়াশিংটনের সোনোরা লুইস স্মার্ট ডড নামে একজন নারী প্রথম এই দিনটি উদযাপন করেন। ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেলে তার বাবা পরম মমতায় তাদের বড় করেন। ১৯০৯ সালে লুইস গির্জার এক বক্তব্যে মা দিবসের কথা জানেন। তখন তার মনে হল বাবার জন্য ও এমন একটি দিবস থাকা উচিত। স্থানীয় বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক তার ধারণাটি গ্রহণ করেন। ১৯১০ সালের ১৯শে জুন অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়। ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন সিদ্ধান্ত নেন এবং এর ৬ বছর পর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে আইনে পরিণত করেন।

সন্তানের হৃদয়ে বাবা দিবস তো প্রতিদিনই
সন্তানের হৃদয়ে বাবা দিবস তো প্রতিদিনই

 

দেশে দেশে বাবা দিবস

মেক্সিকোতে বাবা দিবসে বাবাদের দৌড় প্রতিযোগীতা হয় সন্তান সাথে নিয়ে।

ফ্রান্সে এটি ঐতিহ্যবাহি ক্যাথলিক উৎসব । সেদিন ফ্রান্সের প্রথা যাদের বাবা জীবিত আছে তাদের লাল গোলাপ দেওয়া হয়। মৃত বাবার সমাধিতে সাদা গোলাপ রেখে আসা হয়।

জার্মানিতে বাবারা সন্তানদের সাথে নিয়ে হাইকিং করতে যায়।

নেপালে সন্তানরা বাবাকে মিষ্টি কিনে খাওয়ায়।

থাইল্যান্ডে বাবা দিবস পালিত হয় প্রতি বছর ৫ই ডিসেম্বর। সেদিন থাইল্যান্ডবাসি হলুদ রং এর কাপড় পরে। এটি থাইল্যান্ডের প্রথা।

বাবা মানে মাথার উপর ভরসার এক টুকরো আকাশ

আমার কাছে বাবা মানে হলো ঘরের পিলার। ঘরের একটি পিলার যদি ভেঙে পড়ে তাহলে পুরো ঘরটির ভিত নড়ে যায়। বাবা না থাকার মানে হলো পাড়ার সকল লোক (দায়িত্বহীন) অভিভাবক। আপনি অপরাধ করেন বা না করেন দোষ আপনারই হবে। সঠিক কথাটা বলার অধিকার থাকে না। প্রাপ্য জিনিস পাওয়ার অধিকার থাকেনা। বাবা না থাকা এমন অপরাধ হয়। অধিকারের সম্পর্কগুলো হারিয়ে যায়। দৃষ্টিকটু অসামঞ্জস্য গুলো চোখে পড়ে। খুব কাছের মানুষদের চোখের জল ,বঞ্চনার কষ্ট দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

বাবা না থাকা দুভাবে হয়। এক- বাবা মারা যাওয়া। দুই -থেকে ও হারিয়ে যাওয়া। না থাকার কষ্ট মেনে নেওয়া যায়। হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট দূর্বিসহ।

আমি পৃথিবীর সৌভাগ্যবান মানুষদের একজন। আমার বাবা এবং মা আলহামদুলিল্লাহ্ দুজনেই বর্তমান। বেঁচে আছেন,সুস্থ আছেন এবং নিরাপদ আছেন। বাবা /মা সুস্থ থাকা আল্লাহতায়লার অসীম নেয়ামত।

আপনি যতক্ষণ ঘরে ফিরবেন না আপনার জন্য প্রার্থনারত অবস্থায় থাকবে। আপনার সমস্যা ,আপনার বিপদ কে নিজের সমস্যা বিপদ বলে মনে করবে একমাত্র বাবা। রাগ করার পর আবার এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে বাবা। নিঃস্বার্থভাবে সময়-অসময়ে যে মানুষটা আপনার শক্তি হিসাবে কাজ করবে তিনি হলেন বাবা। একটা বয়সের পর যখন প্রিয়তম মানুষের কাঁধে মাথা রাখা যায় না। ঐ সময়টায় ও যার কাঁধটা, বুকটা খালি পাবেন তিনি হলেন বাবা। আপনার কোন সময়কার কথা বলবেন ! বড় বেলা,ছোট বেলা সকল সময় আপনার ছায়া সঙ্গী আপনার বাবা। এত কাছে যে আপনি কখনো Miss করার সুযোগ পাননি। বৃদ্ধ বয়সে এই বাবাটাই আপনার কাছ থেকে একটু সময় চায়। একটু হাসিমুখ দেখতে চায়। দিতে কী পারি সেই একটু খানি মহামূল্যবান সময়?

আমি সেই বাবাদের কথা বলছিনা যারা থেকেও হারিয়ে গিয়েছে। আমি সেই সকল বাবাদের ও সম্মান জানাই যাঁরা অন্যের সন্তানকে আপন করে নিয়েছে। আমি সেই হিরো বাবাদের কথাই বলছি।

বাবাকে নিয়ে আমরা এভাবে লিখতে পারি

F= Father
A= Accountable
T= To
H= Healthy
E= Enduring
R= Relationship

অথবা এভাবে লিখলেও কম লেখা হবে

F= Faithful
A= And
T= Trustworthy
H= Honouring
E= Every
R= Responsibilities

বাবা মানে কিন্তু শুধু বাবা না। বাবা মানে হলো আমি ছাড়া ও কারও দায়িত্বশীল অভিভাবক। কারো ভাই, কারো চাচা, কারো ফুপা, কারো ভাই, কারো বন্ধু, কারো মামা, কারো নানা-দাদা। একজন ব্যক্তি বহু রঙের রঙে রঙিন। যারা হারায় তারা একই সাথে অনেকগুলো সম্পর্ক হারায়।

বাবা তো বাবাই
বাবা হাতের লাঠি
চোখের দৃষ্টি
বাবা আমার বাবা,
বাবা ছাড়া এই দুনিয়ায় আর আছে কে বা।

পৃথিবীর মৃত এবং জীবিত সকল বাবাদের জন্য অসীম শ্রদ্ধা নিরন্তর ভালবাসা।

 

লেখিকাঃ পারিজাত মানবী

সহকারী শিক্ষিকা – চট্রগ্রাম পোর্ট অথোরিটি গার্লস হাই স্কুল

Leave a Comment